• Breaking News

    কাফনের কাপড় সংখা, সাত বা পাচ কাপড়ে কাফন দেয়া

    লেখকঃ মুজাফ্ফর বিন মহসিন

    সাত কিংবা পাঁচ কাপড়ে কাফন পরানো :

    পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য তিন কাপড়ে কাফন পরানোই ছহীহ হাদীছ সম্মত। মহিলাদেরকে পাঁচ কিংবা সাত কাপড়ে কাফন দেয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা ছহীহ নয়।

    (أ) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِىٍّ ابْنِ الْحَنَفِيَّةِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ  كُفِّنَ فِىْ سَبْعَةِ أَثْوَابٍ

    (ক) মুহাম্মাদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সাত কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল।[1]

    তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে ইবনু আক্বীল নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[2]

    (ب) عَنْ لَيْلَى بِنْتِ قَانِفٍ الثَّقَفِيَّةِ قَالَتْ كُنْتُ فِيْمَنْ غَسَّلَ أُمَّ كُلْثُوْمٍ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ  عِنْدَ وَفَاتِهَا فَكَانَ أَوَّلُ مَا أَعْطَانَا رَسُوْلُ اللهِ  الْحِقَاءَ ثُمَّ الدِّرْعَ ثُمَّ الْخِمَارَ ثُمَّ الْمِلْحَفَةَ ثُمَّ أُدْرِجَتْ بَعْدُ فِى الثَّوْبِ الآخِرِ قَالَتْ وَرَسُوْلُ اللهِ  جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهُ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًا.

    (খ) লায়লা ইবনু কানেফ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মেয়ে উম্মে কুলছূমের মৃত্যুর পর যারা গোসল দিয়েছিল, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাদের প্রথম দিলেন তহবন্দ। তারপর দিলেন জামা, তারপর উড়না, তারপর চাদর দিলেন। অতঃপর সবশেষে একটি কাপড় দ্বারা তাকে ঢেকে দেয়া হল। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় রাসূল (ছাঃ) দরজায় বসেছিলেন। তার কাছে কাপড় ছিল। তিনি সেখান থেকে একটি একটি করে দিচ্ছিলেন।[3]

    তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে নূহ বিন হাকীম ছাক্বাফী নামে এক অপরিচিত রাবী আছে।[4] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যার কাফন পরানোর সময় পাঁচ কাপড় দেয়া হয়েছিল মর্মে জাওযাক্বী অতিরিক্ত যে অংশটুকু করেছেন তা যঈফ ও মুনকার।[5] অনুরূপ হাসান বছরীর উক্তিতে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেওয়ার যে কথা বর্ণিত হয়েছে, এই বর্ণনার আলোকে সেটাও যঈফ।[6]

    [1]. আহমাদ হা/৭২৮ ও ৮০১ ১/৯৪। [2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৪৭৮। [3]. আবুদাঊদ হা/৩১৫৭, ২/৪৫০ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬; আহমাদ হা/২৭১৭৯, ৬/৩৮০। [4]. ইরওয়াউল গালীল হা/৭২৩, ৩/১৭৩ পৃঃ; যঈফ আবুদাঊদ হা/৩১৫৭, পৃঃ ৪৮৩; আহকামুল জানায়েয, পৃঃ ৫৮ وأما حديث ليلى بنت قائف الثقفية في تكفين ابنته في خمسة أبواب فلا يصح إسناده لان فيه نوح بن حكيم الثقفي وهو مجهول كما قال الحافظ ابن حجر; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪। [5]. ফাৎহুল বারী ‘জানাযা’ অধ্যায়, ১৫ নং অনুচ্ছেদের আলোচনা দ্রঃ; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪। [6]. قَالَ الْحَسَنُ الْخِرْقَةُ الْخَامِسَةُ تَشُدُّ بِهَا الْفَخِذَيْنِ وَالْوَرِكَيْنِ تَحْتَ الدِّرْعِ -বুখারী ১/১৬৮ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫।

    তিন কাপড়ে কাফন দেয়ার ছহীহ হাদীছ :

    عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْها أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  كُفِّنَ فِىْ ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لَيْسَ فِيْهَا قَمِيْصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ .

    আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)-কে তিনটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। তাতে জামা এবং পাগড়ী ছিল না।[1]

    অতএব পুরুষ নারী উভয়কে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। এর বেশী নয়। কারণ মহিলাদেরকে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেয়া সম্পর্কে কোন ছহীহ বর্ণনা নেই।

    عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ يُكَفَّنُ الرَّجُلُ فِىْ ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لاَ تَعْتَدُوْا إنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ.

    রাশেদ বিন সা‘দ বলেন, ওমর (রাঃ) বলেছেন, পুরুষ ব্যক্তিকে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। সীমা লংঘন করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের পসন্দ করেন না।[2] আলবানী (রহঃ) বলেন,

    وَمِمَّا لاَ شَكَّ فِيْهِ أَنَّ النِّسَاءَ فِىْ ذَلِكَ كَالرِّجَالِ لِأَنَّهُ الْأَصْلَ كَمَا يُشْعَرُ بِذَلِكَ قَوْلِهِ  إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ.

    ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মহিলারাও এ বিষয়ে পুরুষদের ন্যায়। কারণ পুরুষই মূল। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়। ‘মহিলারা মূলতঃ পুরুষদেরই খন্ড’।[3] আবুবকর (রাঃ)-এর অছিয়তটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।[4]

    [1]. ছহীহ বুখারী হা/১২৭২, ১/১৬৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৯৭, ২/৩৭০ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/২২২৫; মিশকাত হা/১৬৩৫, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৭, ৪/৪৯ পৃঃ। [2]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১১৬৪, সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ। [3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ; তিরমিযী হা/১১৩; মিশকাত হা/৪৪১। [4]. ছহীহ বুখারী হা/১৩৮৭, ১/১৮৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩০৪, ২/৪২৯ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৪। আয়েশা (রাঃ) বলেন, فَنَظَرَ إِلَى ثَوْبٍ عَلَيْهِ كَانَ يُمَرَّضُ فِيهِ بِهِ رَدْعٌ مِنْ زَعْفَرَانٍ فَقَالَ اغْسِلُوْا ثَوْبِى هَذَا وَزِيدُوا عَلَيْهِ ثَوْبَيْنِ فَكَفِّنُونِى فِيهَا قُلْتُ إِنَّ هَذَا خَلَقٌ قَالَ إِنَّ الْحَىَّ أَحَقُّ بِالْجَدِيدِ مِنَ الْمَيِّتِ إِنَّمَا هُوَ لِلْمُهْلَةِ فَلَمْ يُتَوَفَّ حَتَّى أَمْسَى مِنْ لَيْلَةِ الثُّلاَثَاءِ وَدُفِنَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ ।

    No comments