সালাতে সিজদাহ করার পদ্ধতি ৷
সিজদাহ্ হচ্ছে সালাতের শ্রেষ্ঠ অংশ।
এই শব্দটা কোরানে এসেছে মোট ৯২
বার। এবং উল্লেখ আছে পবিত্র
কোরানের ৩২টি পৃথক সূরায়, একটি পৃথক
অধ্যায় আছে, ৩২ অধ্যায়, যেটার নাম সূরা
সাজদা। মাটিতে উপুড় হওয়া এটা
সালাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
প্রধান রুকন ‘সিজদাহ’।
আল্লাহ বলেন ঃ
ﺗﻔﻠﺤﻮﻥ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﻭﺍﻓﻌﻠﻮﺍﺍﺧﻴﺮ ﻭﺍﺭﺑﻜﻢ ﻭﺍﻭﺍﻋﺒﺪ
ﺍﻣﻨﻮﺍﺍﺭﻛﻌﻮﺍﻭﺍﺳﺞﺩ ﻳﻦ ﺍﻟﺬ ﻳﻬﺎ ﻳﺎ
“হে ইমানদারগণ! তোমরা রুকু ও সিজদাহ
কর এবং আল্লাহর ইবাদত কর ও সৎকর্ম কর।
যাতে তোমরা সফলকাম হও”। (সূরা হজ্জ-
আয়াত-৭৭)।
ﻭﺍﻗﺘﺮﺏ ﻭﺍﺳﺠﺪ ﻛﻼﺗﻄﻌﻪ
কখনই না, তুমি ওর অনুসরণ করো না। তুমি
সিজদাহ করো ও আমার নিকটবর্তী হও।
(সূরা আলাক-১৯)।
হাদীস বলছে, ‘বান্দা স্বীয় প্রভূর
সর্বাধিক নিকটে পৌছে যায় যখন সে
সিজদাহ রত হয়।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪)।
রুকু হতে উঠে ক্বওমার দো’য়া শেষ করে
বিনয়ের সাথে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে
সিজদায় যেতে হবে। (বুখারী,
মুসলিম,মিশকাত হা/৭৯৯)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ রাসূল(ছাঃ)এরশাদ
করেছেন, তোমরা সিজদাহ করার সময়
উটের ন্যায় বসবে না এবং সিজদায়
যেতে হাটুর পূর্বে হাত দু’টিকে
মাটিতে রাখবে। (সহীহ আবু দাউদ
হা/৮৪০, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৯৯)।
হাটু পূর্বে রাখা যাবে। (আবু দাউদ
হাদীস -৮৩৮, ইরওয়াউল হা/৩৫৭)।
অনেক আলেম হাদীসটিকে হাসান
বলেছেন। হাসান হলে আমলযোগ্য। তবে
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে
মাজাহ, দারেমী বলেছেন হাদীসটি
যঈফ (যা আমলযোগ্য নয়)।
সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করতে হয়,
যা মাটিতে লেগে থাকবে তা
হলোঃ নাক সহ কপাল, দুই হাতের চেটো,
দুই হাটু, দুই পায়ের আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগ
এই সাতটি অঙ্গ।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৭)।
পায়ের আঙ্গুল গুলোকে কিবলামুখী
করতে হবে। (বুখারী, আবু দাউদ, মিশকাত
হা/৯০৫)।
পায়ের পাতা দু’টিকে মিলিতভাবে
খাড়া করে রাখতে হবে।
(মুসলিম হা/৪৮৬, আবু দাউদ হা/৮৭৯,
নাসাঈ হা/১৬৯)।
করতল ও আঙ্গুল গুলিকে বিছিয়ে রাখতে
হবে।(আবু দাউদ, হাকেম, সিফাতু
সালাতিন্নবী পৃঃ১৪১)।
আঙ্গুল গুলিকে ফাঁক করে না রেখে
স্বাভাবিক ভাবে মাটির উপর রাখতে
হবে।
(বায়হাক্বী, ইবনে খুযায়মা পৃঃ ১৪১)।
সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী
করে রাখতে হবে।
(মুওয়াত্বা, মিশকাত হা/৯০৫, সিজদাহর
ফযিলত অধ্যায়)।
হাত দু’টিকে মাথার দু’পাশে কান অথবা
কাঁধ বরাবর সোজা মাটিতে রাখতে
হবে।
(আবু দাউদ,তিরমিযী, নাসাঈ, ইরওয়াল
গালীল হা/৩০৯; বুখারী, মিশকাত
হা/৭৯২ অনুচ্ছেদ-১০, হা/৮৮৮ অনুচ্ছেদ-১৪)।
এ ব্যপারে হানাফী মাযহাবের নামে
মত প্রকাশ করতে যেয়ে উভয় হাত
মাটিতে রাখবে আর মুখমন্ডল দুই হাতের
তালুর মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করবে
এবং উভয় হাত কান বরাবর রাখবে।
কেননা রাসূল (ছাঃ) এরুপ করেছেন। (আল
হেদায়া প্রথম খন্ড পৃঃ ৮৩)।
কনুইকে মাটি ও পাঁজর বা পেট হতে দুরে
খাড়া রাখতে হবে।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৯,৮৯১)।
মাটিতে কনুই হতে কব্জি পর্যন্ত (কুকুরের
মত মাটিতে বিছিয়ে বসা) বিছিয়ে
বসা যাবে না।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৮)।
পেটের সাথে কনুই লাগিয়ে রাখা
যাবে না। জড়সড় না হয়ে পিঠকে
সোজা রাখতে হবে। নিচের দিকে
বাঁকিয়ে বা উপরের দিকে উঠিয়ে
কুঁজো করে রাখা যাবে না। এবং উরুর
স্পর্শ হতে পেটকে দুরে রাখতে হবে।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৮, ইবনে
বায পৃঃ৭)।
সিজদাহ এমন লম্বা হবে, যাতে বুকের
নিচ দিয়ে একটা বকরীর বাঁচ্চা যাওয়ার
মত ফাঁকা থাকে। (মুসলিম, আবু দাউদ,
মিশকাত হা/৮৯০)।
সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন ঃ যখন মুসলমান সালাত
আরম্ভ করে তার গুনাহ সমূহ মাথার উপর
থাকে, যতবার সে সিজদাহ করে ততবার
গুনাহ ঝরে পড়ে। অতঃপর যখন সে সালাত
শেষ করে তখন তার সব গুনাহ ঝরে যায়।
(সিলসিলা সহীহা হা/৫৭৯)।
সিজদার দোয়াসমূহ ঃ
সিজদায় গিয়ে দোয়া পড়তে
হবেঃ‘সুবাহা-না রাব্বিয়াল আ‘লা’
অথবা অন্য উক্ত সময়ে পড়বার জন্য
হাদীসে উল্লেখ আছে তা বলা।
(নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমীযি, মিশকাত
হা/৮৮১)।
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধীরে
সিজদাহ থেকে মাথা তুলতে হবে। বাম
পাতা বিছিয়ে তার তলদেশের উপর বাঁ
পাছা রেখে বসতে হবে।
(মুসলিম, আবু দাউদ, ইরওয়াউল গালীল
হা/৩১৬)।
ডান পায়ের পাতা খাড়া ও আঙ্গুল
গুলিকে ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে।
(বুখারী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১)।
এমনভাবে সোজা হয়ে বসতে হবে
যাতে প্রত্যেক অস্থি তার নিজ জোড়ে
স্থীর হয়ে যায়।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০,৭৯১, আবু
দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৮০১)।
দুই সিজদাহর মাঝে যে দো’আ পড়তে
হবেঃ
রাসূল (ছাঃ)দুই সিজদাহর মাঝে এত
দীর্ঘ সময় বসতেন যে কেউ কেউ মনে
করত
তিনি মনে হয় পরবর্তী সিজদাহর কথা
ভুলে গেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
৮২ পৃষ্ঠা)।
এবং এই সময় যে সকল দোয়া পড়তে হয়
তাহলঃ দুই সিজদার মাঝখানে স্থির
হয়ে বসা ﻟﻰ ﺍﻏﻔﺮ ﺭﺏ ‘রাব্বিগফিরলী’ দুই
বার বলা।(ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭, আবু দাউদ
হা/ ৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪, নাসাঈ
হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০,৯০১)।
অথবা ﻓﻨﻰ ﻭﻋﺎ ﻭﺍﺭﺯﻗﻨﻰ ﻧﻰ ﻭﺍﻫﺪ ﻭﺍﺭﺣﻤﻨﻰ ﻟﻰ ﺍﻏﻔﺮ
ﺍﻟﻠﻬﻢ
আল্
No comments